আবদুল বারেক ভূইয়া
শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরকুমারিয়া ইউনিয়নে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে “অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান” কর্মসূচী প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ৫টি প্রকল্পের কাজে চলেছে শুভংকরের ফাঁকি। ফলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে সরকার এ প্রকল্প হাতে নিয়েছেন সে উদ্দেশ্য চাঙ্গে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিনে চরকুমারিয়া ইউনিয়নের ৫টি প্রকল্পের মধ্যে ৩টি প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, সরকারী বিধি মোতাবেক প্রত্যেকটি প্রকল্পে যে পরিমাণ শ্রমিক বরাদ্দ রয়েছে তার এক তৃতীয়াংশ মহিলা শ্রমিক কাজ করার বিধান থাকলেও চরকুমারিয়া ইউনিয়নের কোন প্রকল্পেই কোন মহিলা শ্রমিক উপস্থিত নেই। আর যে পরিমাণ পুরুষ শ্রমিক বরাদ্দ রয়েছে তার এক চতুর্থাংশেরও কম শ্রমিক দিয়ে ঢিলে ঢালা ভাবে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে।
সেখানে প্রকল্পের কাজ সঠিক ভাবে তদারকী করার জন্য ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কোন প্রতিনিধিকে পাওয়া যায়নি। তাদের অনুপস্থিতিতে চরকুমারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মোজাম্মেল হক মোল্যা উক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা করছেন। শুধু তাই নয়, ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা যায় প্রকল্পের নামে যে সকল শ্রমিক দেখিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে সে সকল শ্রমিক দিয়ে কাজ না করিয়ে অন্য জায়গার শ্রমিক দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। প্রত্যেকটি প্রকল্পের কাজ সরকারী বিধি মোতাবেক সম্পন্ন করার কথা থাতলেও চেয়ারম্যান তার নিজস্ব কিছু নিয়মে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করছেন।
সেক্ষেত্রে চরকুমারিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে মিয়া সরদারের বাড়ির নিকট হতে বাংলা বাজার ব্রীজ পর্যন্ত রাস্তা পূণঃ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ দেখতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ১৮ জন শ্রমিক মাটি কাটার কাজ করছে। অথচ সরকারী ভাবে এ প্রকল্পে ৬২ জন শ্রমিক বরাদ্দ রয়েছে। সরকারী ভাবে এক জন শ্রমিকের পারিশ্রমিক ধরা হয়েছে ২শত টাকা। কিন্তু চরকুমারিয়ায় ২ শত টাকায় শ্রমিক পাওয়া যায় না বিধায় চেয়ারম্যান ৩ শত টাকা করে শ্রমিক নিয়েছেন। ৬২ জন শ্রমিকের প্রতিদিনের মূল্য আসে ১২ হাজার ৮ শত টাকা। সেক্ষেত্রে প্রতিটি শ্রমিকের পারিশ্রমিক ৩ শত টাকা হলে ১২ হাজার ৮ শত টাকায় শ্রমিক পাওয়া যায় ৪২ জন। কিন্তু চরকুমারিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ১৮ জন শ্রমিক দিয়ে প্রকল্পের কাজ দায় সারা ভাবে সম্পন্ন করছেন। অর্থাৎ প্রতিদিন ২৪ জন শ্রমিকের ৭হাজার ২শত টাকা করে ৪০ দিনে ২ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা তিনি আত্মসাৎ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এ কাজে পূর্ণাঙ্গ মদদ দিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়ণ কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল এবং উপ সহকারী প্রকৌশলী মোঃ গিয়াস উদ্দিন। তাদের ছত্র ছায়ায় থেকেই চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক মোল্যা এতো বড় একটা দুর্নীতি করতে সাহস পেয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, ১নং ওয়ার্ড মেম্বার বিল্লাল হোসেনের সাথে চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক মোল্যার সম্পর্ক এতোটাই খারাপ যে, তিনি অন্য ওয়ার্ডের মেম্বার দানু হাওলাদারকে দিয়ে ১নং ওয়ার্ডে প্রকল্পের করাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে ১নং ওয়ার্ডে কাজ করতে আসা শ্রমিকদের সর্দার বাদশা সরদার বলেন, আমরা আজ ২২ দিন যাবৎ ১৫ থেকে ১৮ জন শ্রমিক দিয়ে এ প্রকল্পের কাজ করাচ্ছি। আমরা প্রতিদিন সকাল ৮টায় মাটি কাটার কাজ শুরু করি এবং দুপুর ২টায় শেষ করি। আমাদেরকে জনপ্রতি ৩শ টাকা করে দেয়া হয়।
এদিকে “অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান” কর্মসূচীর ৪০ দিনের ৩১দিন পার হলেও ২নং ওয়ার্ডে মোতালেব বেপারীর বাড়ি হতে মোশারফ মাঝির বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পূণঃ নির্মাণের কাজ এখন পর্যন্ত শুরু করতে পারেননি। এ প্রকল্পে ৬০ জন শ্রমিক বরাদ্দ রয়েছে। ৪০ দিনে তাদের পারিশ্রমিক হচ্ছে ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। এ প্রকল্পের কাজ না করেই সমস্ত টাকা প্রকল্প বাস্তবায়ণ কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল, উপ সহকারী প্রকৌশলী মোঃ গিয়াস উদ্দিন এবং চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক মোল্যা আত্মসাৎ করার পায়তারা করছেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সোবাহান বেপারী এবং রতন মুন্সি বলেন ২নং ওয়ার্ডে মোতালেব বেপারীর বাড়ি হতে মোশারফ মাঝির বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পূণঃ নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। মাস খানেক আগে ইঞ্জিনিয়ার এসে রাস্তা মেপে গেছে। রাস্তার কাজ আদৌও ধরবে কিনা জানি না।
আর ৩নং ওয়ার্ডে ইব্রাহীম মুন্সির বাড়ি হতে সাত্তার সরকারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পূণঃ নির্মাণ এবং ত্রানের ব্রীজের এপ্রোচে মাটি ভরাট কাজে ৫০ জন শ্রমিক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেখানে ১০ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়। অর্থাৎ চেয়ারম্যান এখানে ২লক্ষ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার পায়তারা করছেন।
এ ব্যাপারে ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোস্তফা কামালের সাথে মুঠো ফোনে আলাপ কালে তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজ সঠিক ভাবে না করলে বিল দেয়া হবে না।
এ ব্যাপারে ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাব্বির আহমেদ এর সাথে মুঠো ফোনে আলাপ কালে তিনি বলেন,“অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান” কর্মসূচীর আওতায় যে প্রকল্প গুলো রয়েছে তা সঠিক ভাবে তদারকীর জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি। কোন প্রকল্প সভাপতি যদি প্রকল্পের কাজ সঠিক ভাবে না করে তাহলে তাকে বিল দেয়া হবে না। আমি এ ব্যাপারটি গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করবো।
“অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান” প্রকল্পের কাজ মানেই শুভংকরের ফাঁকি !
জানুয়ারি ৩, ২০১৮ , ২১:৫২
আপনার মন্তব্য