আবদুল বারেক ভূইয়া
প্রতারণা ও ভয়ভীতির মাধ্যমে একাধিক নারীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক করে তার ভিডিও নেটে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত শরীয়তপুরের সেই ছাত্রলীগ নেতা আরিফ হাওলাদার অবশেষে তার দোষ আদালতে স্বীকার করে নিয়েছে।
২৭ ডিসেম্বর বুধবার বিকেল পাঁচটায় তাকে অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে ১৪৬ ধারায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। জবানবন্দিতে আরিফ তার সমস্ত অপরাধ শিকার করে নিয়েছেন।
এর আগে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার থান্দার খায়রুল হাসান ২৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে গোসাইরহাট উপজেলার সাইখা ব্রিজ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেন।
আরিফ হাওলাদার ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক। ঘটনার পর তিনি ১ মাস ১৫ দিন পলাতক ছিলেন।
এ ব্যাপারে শরীয়তপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার থান্দার খায়রুল হাসান সংলাপ ৭১.কমকে বলেন, মামলা হওয়ার পর আরিফ হোসেন পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। পুলিশের তিনটি টিম তাকে ধরার জন্য কাজ করেছে। অবশেষে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এবং পুলিশ হেড কোয়ার্টার এল.আই.সি’র সহযোগিতায় আরিফ হাওলাদারকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে সে অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলামের আদালতে তার সমস্ত অপরাধ স্বীকার করে নেন।
উল্লেখ্য, ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক আরিফ হাওলাদার গোপনে ছয় নারীর আপত্তিকর ভিডিও করে এবং ওই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তাদের ধর্ষণ করে। এসব ধর্ষণের চিত্রও গোপনে ভিডিও করে রাখে।
লোকলজ্জার ভয়ে ঘটনার শিকার নারীরা এসব কথা কাউকে না বললেও সম্প্রতি ওই সব ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওগুলোতে গৃহবধূ ও কলেজছাত্রীসহ ভিন্ন ভিন্ন ৬ নারীর সঙ্গে আরিফকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখা গেছে। ভুক্তভোগী ছয় নারীর মধ্যে চারজনের পরিচয় জানা গেলেও দুজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
এ ঘটনায় ১০ নভেম্বর আরিফকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগ। পরে ভুক্তভোগী এক গৃহবধূ গত ১১ নভেম্বর (শনিবার) ভেদরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, আসামি আরিফ হাওলাদার তার স্বামীর আত্মীয় হওয়ায় এবং কাছাকাছি বাড়ি হওয়ায় মাঝে মধ্যেই তার শ্বশুরবাড়িতে আসত। তার স্বামী বিদেশ যাওয়ার পর গত ১ মার্চ ২০১৭ তারিখে রাত সাড়ে ১০টার দিকে আরিফ হঠাৎ করেই তার ঘরে ঢুকে পড়ে এবং জড়িয়ে ধরে আপত্তিকর ভিডিও করতে থাকে। এক পর্যায়ে ওই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে আরিফ।
ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ বলেন, আমার মতো অনেক মেয়ের সর্বনাশ করেছে আরিফ। তাই আমি মামলা করি। আরিফ গ্রেফতার হয়েছে শুনেছি। আরিফ গ্রেফতার হওয়ায় আমি কিছুটা হলেও শান্তি পাচ্ছি। আমি ওর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। এমন শাস্তি দেয়া হোক, যাতে এ ধরনের ঘটনা আর কেই না ঘটাতে পারে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভেদরগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক সজল পাল জানান, ধর্ষণ মামলার আসামী আরিফ হাওলাদারকে বুধবার আদালতে হাজির করা হয়। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিতে রাজী হওয়ায় অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বেলা ৩ টায় নিজ কক্ষে আরিফের জবানবন্দী নেয়া শুরু করেন। বিকাল ৫ টায় জবানবন্দী গ্রহণ শেষ হয়। এ সময় আরিফ মামলার বাদী গৃহবধুকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে নেয়।
আপনার মন্তব্য