
স্টাফ রিপোর্টার
শরীয়তপুর সদর উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক মোল্যা, সচিব মোঃ সেলিম মিয়া এবং ট্যাগ অফিসার আবদুস সালাম মিয়ার বিরুদ্ধে ৯শ ২১ কেজি ত্রাণের চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে যাওয়া গ্রামের অসহায় গরীব মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয় শরীয়তপুর সদর উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের ৩শ ৭টি পরিবারকে ১৫ কেজি করে মোট ৪ হাজার ৬শ ৫ কেজি চাল বরাদ্দ দিয়েছেন।
সেই চাল গত ২১ মে বৃহস্পতিবার চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিতরণ করা হয়। সরকারী বিধি মোতাবেক প্রত্যেকটি পরিবারকে ১৫ কেজি করে চাল দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু সরকারী বিধান অমান্য করে প্রত্যেকটি পরিবারকে ১৫ কেজি চালের পরিবর্তে ১২ কেজি চাল দেয়া হয়।
আর এই চাল কম দেয়ার কারণ খোঁজতে গিয়ে জানা যায়, চাল বিতরণের পূর্বেই চন্দ্রপুর ইউনিয়িন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক মোল্যা, সচিব মোঃ সেলিম মিয়া এবং ট্যাগ অফিসার আবদুস সালাম যোগসাজসে ৯শ ২১ কেজি ত্রাণের চাল আত্মসাৎ করেছেন। আর সেই আত্মসাতকৃত চালের ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে চাল বিতরণের সময় প্রত্যেকটি পরিবারকে ১৫ কেজি চালের পরিবর্তে ১২ কেজি চাল দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ড মেম্বার রিপন সিকদার বলেন, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে যাওয়া গরীব মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয় চন্দ্রপুর ইউনিয়নের ৩শ ৭টি পরিবারকে ১৫ কেজি করে মোট ৪ হাজার ৬শ ৫ কেজি চাল বরাদ্দ দিয়েছেন।
সেই চাল গত ২১ মে বৃহস্পতিবার চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিতরণ করা হয়। চাল বিতরণের শুরুর দিকে আমি ছিলাম না। আমি পরিষদে এসে দেখি চাল বিতরণ প্রায় শেষ। কয়েক জনকে দেখলাম চাল নিয়ে যাচ্ছে। চালের বোস্তা দেখে সন্দেহ হলো। তখন তিন চার জনের চাল মেপে দেখি কোন বোস্তায়ই ১৫ কেজি চাল নেই। আছে সারে ১১ থেকে ১২ কেজি চাল। তখন আমি সচিবকে বলে সেই চাল পূরণ করে দেই।
আমার ধারণা, কোন পরিবারকেই ১৫ কেজি করে চাল দেয়া হয়নি। তাহলে ৩শ ৭ জনের ৩ কেজি করে ৯শ ২১ কেজি গেলো কই! আমার মনে হয় চেয়ারম্যানের নির্দেশে এই ৯শ ২১ কেজি চাল সচিব মোঃ সেলিম মিয়া এবং ট্যাগ অফিসার আবদুস সালাম স্টোর রুম থেকে সরিয়ে ফেলেছে।
শুধু তাই নয়, চাল বিতরণের জন্য সরকারী ভাবে যে তালিকা দেয়া হয়েছে সেই তালিকা মোতাবেক সচিব এবং ট্যাগ অফিসার চাল বিতরণ করেননি। তারা চেয়াম্যানের ইচ্ছে মাফিক যে নতুন নাম দিয়েছে তা তারা হাতে লিখে চাল বিতরণ করেছেন। যার কারণে সরকারী নির্দেশিত অনেক নাম বাদ পরেছে। বিধায় অনেক দরিদ্র লোক চাল পায়নি।
চন্দ্রপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোক্তার সিকদার বলেন, বৃহস্পতিবার চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে ত্রাণের চাল দেয়া হয়েছে, তা সঠিক ভাবে দেয়া হয়নি। প্রত্যেকটি পরিবারকে ১৫ কেজি করে চাল দেয়ার কথা থাকলেও ১৫ কেজির পরিবর্তে ১২ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। বাকী ৯শ ২১ কেজি চাল চেয়ারম্যান ওমর ফারুক মোল্যা, সচিব মোঃ সেলিম মিয়া এবং ট্যাগ অফিসার আবদুস সালাম মিলে আত্মসাৎ করেছে। যার প্রমান আমাদের কাছে রয়েছে।
এ ব্যাপারে চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোঃ সেলিম মিয়ার সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, চাল সঠিক ভাবেই দেয়া হয়েছে। শেষের দিকে চাল একটু কম ছিল তাই ১২ কেজি করে দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের ট্যাগ অফিসার আবদুস সালাম বলেন, চাল বিতরণের ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম হয়নি। তবে শেষের দিকে চাল একটু কম ছিল তাই কম দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক মোল্যার সাথে মুঠোফোনে আলাপ কালে তিনি বলেন, প্রাণনাশের ভয় থাকায় আমি পরিষদে কম যাই। আমি পরপর তিন বার হামলার শিকার হয়েছি। আমার অফিসিয়াল কাজকর্ম সচিব, মেম্বার এবং ট্যাগ অফিসার করে আমার কাছে নিয়ে আসে আমি দেখে সই স্বাক্ষর করে দেই। চাল বিতরণে অনিয়মের কথা আমি শুনেছি। কিন্তু কিছুই করার নেই। এখন যদি আমি কিছু করতে যাই তাহলে আবার হামলার শিকার হবো। তাছারা চাল দেয়ার সময় আমি ছিলাম না। এ ব্যাপারে সচিব, ট্যাগ অফিসার এবং মেম্বারগণ ভাল বলতে পারবে।
এ ব্যাপারে শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহাবুর রহমান শেখের সাথে মুঠোফোনে আলাপ কালে তিনি বলেন, চন্দ্রপুর ইউনিয়নে ত্রাণের চাল কম দেয়ার সংবাদ পেয়ে আমি তাৎক্ষণিক ভাবে সেখানে যাই। সেখানে কয়েক জনকে চাল কম দেয়ার প্রমাণ পেয়েছি। কিন্তু সকলকে চাল কম দিয়েছে তার প্রমাণ পাইনি। তারপরেও চাল আত্মসাতের অভিযোগ থাকলে পুণরায় তদন্ত করা হবে।
আপনার মন্তব্য