
স্টাফ রিপোর্টার
জাজিরায় চাঞ্চল্যকর শাকিল হত্যা মামলার ৬ মাস পার হলেও মূল হোতা বাবু ফরাজিকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। বাবু ফরাজির নাম ১৬৪ ধারায় আসলেও জাজিরা থানা পুলিশ তাকে ধরতে গড়িমশি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন শাকিলের পরিবারের। এদিকে আসামীরা প্রতিনিয়ত শাকিলের পরিবারকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।
১ ডিসেম্বর সকালে সরেজমিনে গেলে, পূর্ব নাওডোবা গ্রামে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি বলেন, আসামি বাবু ফরাজিদের অনেক ক্ষমতা, পুলিশ ধরে না। ওরা পূর্ব নাওডোবার সবচেয়ে প্রভাবশালী। আর যারে মারছে তার বাবা কৃষক এবার বুঝেন কতটা দূর্বল। এমনকি শাকিলের পরিবার নিরীহ হওয়ায় মামলার কার্যক্রমও চলছে ধীরগতিতে। পাশাপাশি অপহরণকারীদের হুমকির মুখে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবারটি।
পূর্ব নাওডোবা গ্রামে শহিদুল ইসলাম বলেন, আসামির ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে হত্যার মূলহোতা বাবু ফরাজির নাম আসলেও পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেননি। তারা বাবু ফরাজিকে ধরতে অস্বীকৃতি জানান। এবিষয়ে আমরা বার বার জাজিরা থানায় গেলে আমাদের সাথে নয়-ছয় করছে। আমরা প্রকৃত অপরাধীর শাস্তি চাই।
নিহত শাকিলের বাবা সালাম মাদবর জানান, শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা গ্রামে তাদের বাড়ি। তার বড় ছেলে শাকিল স্থানীয় অ্যাম্বিশন কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছিল।
২৫ জুন বিকেলে একই এলাকার সাকিব ওরফে বাবু খেলার কথা বলে তার ছেলে শাকিলকে ডেকে নিয়ে যায়। কিন্তু এরপর আর সে বাসায় ফেরেনি। বিভিন্ন স্থানে ছেলেকে খুঁজেও না পেয়ে তিনিসহ পরিবারের লোকজন সাকিবের বাড়িতে গিয়ে শাকিলের সন্ধান করেন। কিন্তু সাকিব কিছু জানে না বলে কৌশলে এড়িয়ে যায়। ওই দিন রাতেই একটি মোবাইল নম্বর থেকে শাকিলের চাচাকে ফোন করে জানানো হয়, শাকিল তাদের হাতে বন্দী আছে। ৫ লাখ টাকা না দিলে হত্যা করে লাশ গুম করা হবে।
ওই ফোন পেয়ে পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে সাকিব ও ইমরান মোড়লকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এক পর্যায়ে তারা শাকিলকে অপহরণের কথা স্বীকার করে।
তারা জানায়, আক্তার মাদবর, সজিব মাঝি, ইমরান মোড়ল, মহসিন হাওলাদার, স্বপন সরদারসহ আরো কয়েকজন মুক্তিপণ না পেয়ে শাকিলকে হত্যা করে লাশ জাজিরার পশ্চিম নাওডোবা এলাকায় নির্মাণাধীন রেলসেতুর ৩৯ নম্বর পিলারের কাছে বালু মাটির নিচে পুঁতে রেখেছে।
২৭ জুন রাতে ওই স্থান থেকে শাকিলের লাশ উদ্ধার করা হয়। দুর্বৃত্তরা শাকিলকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে।
এ ঘটনায় শাকিলের বাবা সালাম মাদবর ২৭ জুন জাজিরা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাকিব ওরফে বাবু, আক্তার মাদবর, সজিব মাঝি, ইমরান মোড়ল, মহসিন হাওলাদার, স্বপন সরদারসহ আরো কয়েকজন অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
সালাম মাদবর অভিযোগ করেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুরুতে তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর মামলার কার্যক্রম ধীরগতিতে চলতে থাকে। এমনকি গ্রেফতারকৃত হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যান্যদের নাম বললেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না।
গ্রেফতারকৃত ইমরান মোড়ল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে শাকিলকে অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা হিসেবে বাবু ফরাজীর নাম বললেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। বাইরে থাকা হত্যা মামলার অন্য আসামিরা তাকে ও পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এবিষয়ে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম সরকর বলেন, ছেলেটিকে (কিশোর শাকিল) যে ডেকে নিয়েছিলো তাকে ধরেছি, যে মারছিলো তাকে ধরেছি, যে লাশ গুম করছিলো তাকেও ধরছি। ঘটনার মূল হোতা বাবু ফরাজীকে কেন গ্রেফতার করতে পারেননি, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলাটি তদন্তাধিন। এ পর্যায়ে মামলার আসামি যারা তাদের গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যহত আছে।
আপনার মন্তব্য