
স্টাফ রিপোর্টার
শরীয়তপুরে কলেজ ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় প্রধান আসামী জাজিরা পৌরসভার মেয়র ইউনুস বেপারীর ছেলে মাসুদ বেপারীর জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
১১ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় তার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
গত ৮ জুলাই মামলা দায়েরের মাত্র ৮ দিনের মাথায় একই আদালতের একজন ভারপ্রাপ্ত নারী বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাসুদকে অন্তরবর্তীকালিন জামিন দিয়েছিলেন। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ভুক্তভোগীর পরিবারকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছিলেন মাসুদ। যার প্রেক্ষিতে কলেজছাত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছিলো। এদিকে অভিযুক্ত মেয়রের ছেলেকে জামিন দেয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দেয়ার পাশাপাশি ফুঁসে উঠে ছিলো শরীয়তপুরের সুশীল সমাজ।
তারই ধারাবাহিকতায় ১০ জুলাই বুধবার শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শরীয়তপুর জেলা মানবাধিকার কমিশন, বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এসডিএস, নুসা এবং জাতীয় মহিলা সংস্থা মাসুদের জামিনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। আজ ১১ জুলাই মাসুদ আদালতে হাজির হলে আদালত তার জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন ভিকটিম নিজে ও তার মা-বাবা।
উল্লেখ্য : গত ২৯ জুন বিকেলে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা পৌরসভার মেয়র ইউনুছ বেপারী বিবাহিত পূত্র মাসুদ বেপারী হতোদরিদ্র প্রান্তিক কৃষকের এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীকে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে মেয়েটিকে শ্বাস রোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। নিজের বুদ্ধি আর সাহসিকতার জোরে মেয়েটি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
বিষয়টি রাত ১০টার দিকে জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ জানতে পারলে মাসুদ বেপারীকে রাত আড়াইটার দিকে আটক করে। ৩০ জুন ওই মেয়েটি ও তার বাবা দুপুরে জাজিরা থানায় হাজির হয়ে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। ১জুলাই ধর্ষক মাসুদকে আদালতের মাধ্যমে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
৭ জুলাই ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মাসুদের জামিন প্রার্থনা করে তার আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষ মাসুদের জামিনের বিরোধীতা করে ৭ দিনের রিমান্ড দাবী করেন। কিন্তু আদালত মাসুদের জামিন নামঞ্জুর করেন এবং রিমান্ড আবেদটিও না মঞ্জুর করেন। ৮ জুলাই মাসুদের আইনজীবী জেলা ও দায়রা জজ আদলতে পূণরায় মাসুদের জামিন আবেদন করলে একজন নারী বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ) মরিয়ম মুন মুঞ্জুরী ধর্ষক মাসুদকে জামিনে মুক্তির আদেশ দেন। এদিকে ধর্ষক মাসুদ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর ধর্ষিতা মেয়েটির পরিবারকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য বিভিন্ন প্রভাবশালী লোকদের মাধ্যমে ভয়-ভীতি এবং চাপ দিয়ে আসছে।
ফলে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছিল মেয়েটির পরিবার। এরপর ১০ তারিখ দুপুরে জাজিরা থানায় ধর্ষিতা মেয়েটির বাবা এবং মামলার বাদী নিরাপত্তা চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।
মাসুদের জামিন বাতিল হওয়ার পর ধর্ষিতা মেয়েটির বাবা ও মা জানান, কুদ্দুছ মৃধা নামে এক ব্যক্তি অপরাপর আরো আট-দশজন ব্যক্তিকে নিয়ে ৮ তারিখ রাতে আমার বাড়িতে গিয়ে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করে এবং আমাকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে। আমি তাদের ভয়ে আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘরের ভিতর পালিয়ে থাকি। পুণরায় ১০ জুলাই কুদ্দুছ মৃধা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমাকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয়। ফলে আমরা জাজিরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করি। আজ মাসুদের জামিন বাতিল হওয়ায় আমরা আদালতের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং মাসুদের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করছি।
আপনার মন্তব্য