
স্টাফ রিপোর্টার
নড়িয়ায় একটি প্রভাবশালী মহল পদ্মার ডান তীর রক্ষা বাঁধের ৫শ মিটারের মধ্যে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে পদ্মানদী পুণরায় ভাঙ্গনের আতংকে পড়েছে পদ্মা পাড়ের হাজার হাজার মানুষ। অপরদিকে সরকারের হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ভেস্তে যেতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
গত বর্ষা মৌসুমে পদ্মার ভাঙ্গনে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গৃহহীন হয়েছে প্রায় ৬ হাজার পরিবার। যার প্রেক্ষিতে সরকার নড়িয়াবাসিকে রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকা বরাদ্ধ দিয়ে পদ্মানদীর ডানতীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। গত এক বছর যাবত নৌ বাহিনীর মাধ্যমে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এদিকে পদ্মার ডানতীর রক্ষা বাঁধের উত্তর পার্শ্বে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে চরআত্রা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর রহিম। তিনি নাকি সরকারের চাইতেও অনেক বেশী প্রভাবশলী বলে জানান স্থানীয়রা।
পদ্মার ভাঙ্গনে গৃহহীন আব্দুল মজিদ মুন্সিসহ স্থানীয়রা জানায়, প্রতিবছরই পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে নড়িয়া উপজেলার হাজার হাজার ঘরবাড়ী রাস্তাঘাট স্কুলসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ২০১৮ সালের বর্ষা মৌসুমে পদ্মার ভাঙ্গনে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গৃহহীন হয়েছিল প্রায় ৬ হাজার পরিবার। গত বছর ভাঙ্গন রোধে সরকার প্রায় ১শ ৯৭ কোটি টাকা ব্যায়ে পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধ নামে ৯ কিলোমিটারের একটি প্রকল্প হাতে নেয়। ভাঙ্গন রোধে লাখ লাখ জিও ব্যাগ ও আর সি ব্লক ফেলে ভাঙ্গন রোধ করে। গত বছর আকস্মিক ভাবে একই উপজেলার দক্ষিণ কেদারপুর ইউনিয়নের কিছু অংশে পুণরায় ভাঙ্গন দেখা দেয়। এরপর ঐ এলাকায় জিও ব্যাগ ও আর সি ব্লক ফেলে ভাঙ্গন রোধ করে। গত এক বছর ধরে ডান তীর রক্ষা বাঁধের কাজ চলমান রয়েছে।
এরই মধ্যে পদ্মা নদীর তলদেশ থেকে চরআত্রা ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বারের নেতৃত্বে একটি মহল দীর্ঘ দুই মাস ধরে অবাধে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। পুণরায় ভাঙ্গনের আতংকে পড়েছে পদ্মা পাড়ের হাজার হাজার মানুষ। সেই সাথে ভেস্তে যেতে পারে সরকারের হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। এদিকে প্রশাসন ব্যাপারটি দেখেও না দেখার ভান করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার ডান তীর রক্ষা বাঁধের উত্তর পাশে মাত্র ৫শ মিটার দুরেই সরকারী ড্রেজারের পার্শে¦ই অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে কমপক্ষে ২০/২৫ টি বলগেট দিয়ে পদ্মার তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করে দেদারছে বালু বিক্রি করছে। অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙ্গনের মুখে পড়তে পারে নড়িয়া উপজেলার শেহের আলী মাদবর কান্দি, নড়িয়া পৌর এলাকার লঞ্চঘাট, বাঁশতলা, মুলফৎগঞ্জ, সাধুর বাজার, কেদারপুর, পাঁচগাঁও, শুরেশ্বর সহ ২০ টি গ্রাম।
নড়িয়া পৌরসভার ভাঙ্গন কবলিত লঞ্জঘাট এলাকার রাজিয়া বেগম বলেন, কয়েকবার ভাঙ্গনের স্বীকার হয়ে এখানে এসেছি। এখন অবৈধ ড্রেজার দিয়ে পদ্মা নীচ থেকে বালু কাটলে আবার ভাঙ্গন দেখা দিবে। আমরা কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব। এ অবৈধ ড্রেজার বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
বালু উত্তোলনের কথা স্বীকার করে চরআত্রা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর রহিম বলেন, বালু উত্তোলন করে পদ্মার ডান তীর রক্ষা বাঁধের ঠিকাদার বেঙ্গল গ্রুপ। আমি বিভিন্ন সাইটে বালু সরবরাহ করি।
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন কারীদের বিরুদ্ধে অচিরেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়ন্তি রুপা রায় বলেন, আমরা অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে একাধিক বার অভিযান পরিচালনা করেছি। সরকারী ড্রেজারের বাইরে কাউকে অবৈধ ভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেইনি। অচিরেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনার মন্তব্য