আলমগীর হোসেন আলম
শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ এইচ.এম তৌহিদুল বাশারের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে অফিস চালাকালিন প্রাইভেট প্র্যাকটিস করার অভিযোগও রয়েছে। এ সকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৭ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুর ১টায় নড়িয়া উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, ডাঃ এইচ.এম তৌহিদুল বাশার হাসপাতালে নেই। এদিকে দূর-দূরান্ত থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা অসহায় গরীব রোগীরা তার চেম্বারের সামনে দাড়িয়ে আছেন। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে অনেক খোঁজা খঁজির পর দুপুর এক টায় তাকে পাওয়া গেল। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিকটবর্তী লাইফ কেয়ার হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি বেসরকারী হাসপাতালে বসে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করছেন। বিকেল ৩টায় লাইফ কেয়ার হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে তার অনুপস্থিতির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন ইমারজেন্সি ডিউটি কি সেটা আপনাকে বুঝতে হবে। আমি ২৪ ঘন্টা ডিউটি করছি না। আমি ডিউটি করছি ৭২ ঘন্টা। এখনও আমি হাসপাতালেই আছি। ইমারজেন্সি রোগী থাকলে আমাকে কল দিবে তখন আমি হাসপাতালে গিয়ে রোগী দেখবো। সকাল দশটা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত এই ছয় ঘন্টা আপনি হাসপাতালে নেই। এদিকে ইমারজেন্সিতে হার্ডের রোগীসহ ২০-২৫ জন কাঁটা ছেড়া রোগী চিকিৎসার জন্য অপেক্ষো করছে। আর আপনি লাইফ কেয়ার হাসপাতালে বসে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করছেন। কেন ? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওখানে মেডিকেল এ্যাসিসটেন্ট আছে তারা যদি মনে করে আমার থাকা প্রয়োজন, তাহলে আমাকে কল দিবে। তারা যেটা না পারবে সেটা আমি করবো। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নড়িয়া উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মনির আহমেদ খান একজন সহজ সরল এবং ভাল মানুষ। তার সরলতার সুযোগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসকরা নিয়মিত অফিসে না এসে বাইরে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করছেন। এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনেক কক্ষে মেডিকেল অফিসারের নাম ফলক লাগানো থাকলেও কোন কক্ষেই কোন চিকিৎসককে পাওয়া যায়নি। তারা প্রত্যেকেই তাদের নিজস্ব চেম্বারে প্রাইভেট প্র্যাকটিস নিয়ে ব্যাস্ত রয়েছেন। চামটা ইউনিয়নের গুলমাইজ গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আবু তাহের ছৈয়াল বলেন, আমি আজ আট দিন যাবৎ জ্বরে ভুগতেছি। ডাঃ এইচ.এম তৌহিদুল বাশারকে দেখাবো বলে সকাল ১০ থেকে অপেক্ষা করছি। কিন্তু বাশার ডাক্তারের খবর নেই। তিনি হাসপাতালে আসবেন কিনা তাও জানি না। কেদারপুর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা হনুফা বিবি নামে আরেক রোগী বলেন, আমি বাশার ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে এসেছিলাম। তিনি হাসপাতালে নেই। তাই চলে যাচ্ছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মচারী বলেন, এখানে যে কয়জন মেডিকেল অফিসার রয়েছেন তারা সবাই কাজে ফাঁকি দেয়। ঠিক মতো অফিস করে না। অফিস চলাকালিন প্রাইভেট প্র্যাকটিস নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন। যখন তখন ক্লিনিকে চলে যান। এ ব্যাপারে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মনির আহমেদ খানের সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, অফিস চলাকালিন প্রাইভেট প্র্যাকটিস আইনের পরিপন্থি। আমি ব্যাপারটি শুনেছি। এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে শরীয়তপুর সিভিল সার্জন ডাঃ খলিলুর রহমানের সাথে সরাসরি আলাপ কালে তিনি বলেন, অফিস চলাকালিন যদি কোন কর্মকর্তা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে, তাহলে তা ঠিক করছে না। আমি ব্যাপারটি দেখছি।
নড়িয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এম.ও’র বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ
এপ্রিল ২২, ২০১৮ , ২২:৩৫
আপনার মন্তব্য