মিতালী শিকদার
আহমেদ ফয়সালের বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের আহাজারীতে ভারী হয়েছে আকাশ বাতাস। ছেলের মৃত্যুর সংবাদে মা সামসুন্নাহার বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। বাবা সামসুদ্দিন সরদার বিলাপ করে বেড়াচ্ছেন “আয় বাবা আমার বুকে ফিরে আয়”। এমন একটি মর্মস্পর্শি আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়েছে শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ ডামুড্যা গ্রামে। গত কাল নেপালের ত্রি-ভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হওয়া ইউএস-বাংলা বিমানের যাত্রী ছিলেন আহমেদ ফয়সাল। তিনি বৈশাখী টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার।
আহমেদ ফয়সালের পরিবার সূত্রে জানা যায়, আহমেদ ফয়সাল ২০০৪ সালে ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। তারপর ঢাকা তিতুমীর কলেজে এইচএসসি এবং স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স সম্পন্ন করেন। পরে তিনি বৈশাখী টেলিভিশনে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগদান করেন। আহমেদ ফয়সাল তিন ভাই এবং দুই বোনের মধ্যে সবার বড়। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন অবিবাহিত। তিনি বৈশাখী টেলিভিশনে প্রধানমন্ত্রীর নিউজ কাভারেজ দিতেন।
নেপালে ঘুরতে যাওয়ার কথা কাউকে বলেনি ফয়সাল। সোমবার সকাল ১১ টায় ঢাকায় বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বড় বোন শিউলীকে বলেছিল ঢাকার বাইরে যাচ্ছি।
নিহতের খালাতো ভাই মো. জাকির হোসেন সুমনের সাথে আলাপ কালে জানা যায়, পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে ফয়সাল নেপালে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এর মধ্যেই বিমান বিধ্বস্ত হয়। এ খবর জানাজানি হলে সোমবার রাতে ডামুড্যা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম খবর নেন এবং আহমেদ ফয়সালের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান। এ ঘটনায় ফয়সালের বাড়িতে ও এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ফয়সালের বাবা সামসুদ্দিন সরদার কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ছেলে যে নেপাল গিয়েছে আমরা কেউ জানতাম না। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার অনেক পড়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারী ফোন দিয়ে ফয়সাল কোথায় জানতে চান। তখন আমি আমার বড় মেয়ে শিউলীকে ফোন দেই। তখন বড় মেয়ে শিউলী আমাকে জানায়, ফয়সাল ঢাকার বাইরে যাওয়ার কথা বলে সকালে বাসা থেকে বের হয়েছে। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। রাতে আমরা নিশ্চিত হই নেপালের বিধ্বস্ত বিমানে ফয়সাল ছিল।
উল্লেখ্য, সোমবার ইউএস-বাংলার বিমানটি ঢাকা থেকে ৭১ জন আরোহী নিয়ে নেপালের উদ্দেশে যাত্রা করে। ওইদিন নেপালের স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ৪ ক্রু ও ৬৭ আরোহী নিয়ে বিমানটি কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়। এতে অন্তত ৫০ জনের প্রাণহানি ঘটে। আর ওই সকল যাত্রীদের সাথে আহমেদ ফয়সাল ছিলেন।
আপনার মন্তব্য