হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
হবিগঞ্জের শায়েস্তগঞ্জে স্কুলছাত্রী বিউটি আক্তারকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
৩ এপ্রিল, মঙ্গলবার বিকেলে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) বিধান ত্রিপুরার হাতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আ স ম শামছুর রহমান ভূঞা।
শামছুর রহমান ভূঞা প্রিয়.কমকে জানান, তদন্তকালে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে যেদিন ঘটনা ঘটে, তার ৮ দিন পর ভিকটিমের মেডিকেল করানো হয়। এর মধ্যে তিনি ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করেনি। আসামিকেও ধরতে ব্যর্থ হন তিনি।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, এই ঘটনায় সালিশেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তার পরও কিছু করতে না পারা শুধু কর্তব্যে অবহেলা নয়, বরং তার দক্ষতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। যদি যথাসময়ে মেডিকেল করানো হতো এবং আসামিকে গ্রেফতার করা হতো, তাহলে হয়তো বিউটিকে হত্যা করতে পারত না হত্যাকারী।
শায়েস্তাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনিসুর রহমানকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান শামছুর।
এর আগে সোমবার এসআই জাকির হোসেনকে প্রত্যাহার করেন পুলিশ সুপার (এসপি) বিধান ত্রিপুরা। গত বৃহস্পতিবার বিধান ত্রিপুরা তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেন। তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয় কমিটিকে।
হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আ স ম শামছুর রহমান ভূঞাকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন বানিয়াচং সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) শৈলেন চাকমা ও সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম।
গত ২১ জানুয়ারি শায়েস্তাগঞ্জের ব্রাহ্মণডোরা গ্রামের দিনমজুর সায়েদ আলীর মেয়ে বিউটি আক্তারকে (১৪) বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বাবুল মিয়া ও তার সহযোগীরা। এক মাস তাকে আটকে রেখে ধর্ষণ করে। এক মাস নির্যাতনের পর বিউটিকে কৌশলে তার বাড়িতে রেখে পালিয়ে যায় বাবুল।
এ ঘটনায় গত ১ মার্চ বিউটির বাবা সায়েদ আলী বাদী হয়ে বাবুল ও তার মা স্থানীয় ইউপি মেম্বার কলমচানের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। পরে মেয়েকে সায়েদ আলী তার নানার বাড়িতে লুকিয়ে রাখেন। পরবর্তী সময়ে বাবুল ক্ষিপ্ত হয়ে ১৬ মার্চ বিউটি আক্তারকে লাখাই উপজেলার গুনিপুর গ্রামের তার নানার বাড়ি থেকে রাতের আঁধারে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। ফের ধর্ষণের পর তাকে খুন করে লাশ হাওরে ফেলে দেয়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
বিউটিকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে ১৭ মার্চ তার বাবা সায়েদ আলী বাদী হয়ে বাবুল মিয়াসহ দুজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার পর ২১ মার্চ পুলিশ বাবুলের মা কলমচান ও সন্দেহভাজন হিসেবে একই গ্রামের ইসমাইলকে আটক করে। ৩১ মার্চ সিলেট থেকে প্রধান আসামি বাবুলকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আপনার মন্তব্য