
শাকিল আহম্মেদ
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে দায়িত্বরত ইন্সট্রাক্টর শাহিনূর আক্তারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিনি রহস্যজনক ভাবে দীর্ঘ ৬ বছর যাবৎ ভেদরগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত। বাড়ি শরীয়তপুর জেলাতেই। এর আগে বেশ কয়েকবার তাকে বদলি করা হলে কি এক অদৃশ্য হাতের ইশারায় আবারও ফিরে এসেছেন ভেদরগঞ্জে। অফিসকে বানিয়েছেন নিজের বাড়ির মত। নিজের ইচ্ছা ও খেয়াল-খুশি মত আসেন অফিসে। প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ম আর দুর্নীতি করে হাতিয়ে নেন হাজার হাজার টাকা। এমন নানামূখী অভিযোগ শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে দায়িত্বরত ইন্সট্রাক্টর শাহিনূর আক্তারের বিরুদ্ধে। তার অনিয়ম আর দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলার শতাধিক শিক্ষক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। আর অভিযোগের অনুলিপি প্রদান করেছেন, ভেদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট এবং জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বরাবর।
প্রাথমিক শিক্ষকদের অভিযোগ, ট্রেনিং চলাকালীন সময় ৫হাজার ৮শ ৮০ টাকার বিল স্বাক্ষর রেখে ৫হাজার ২শ টাকা প্রদান, ৫শ টাকার ব্যাগের বদলে ১শ ৫০ টাকার ব্যাগ প্রদান, ৮০ টাকা নাস্তা বিল কেটে নিয়ে ২৫ টাকার নাস্তা সরবরাহ করা, সাপোর্ট সার্ভিসের ২শ টাকা থেকে ১শ টাকা আত্মসাত, প্রয়োজনীয় মনিহারী না দিয়ে টাকা আত্মসাত করা, অডিটের নামে টাকা কেটে নেয়া, অতিথিদের গিফটের নামে টাকা কেঁটে নেয়া সহ নানা রকম অনিয়ম দুর্নীতি করে শাহিনূর আক্তার প্রতিবছর শিক্ষকদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্ম দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর তাদের বিষয় ভিত্তিক ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে থাকে সরকার। উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টরের অধীনে তারা এ ট্রেনিংয়ে অংশ নিয়ে থাকে। প্রতি ব্যাচে ২ জন প্রশিক্ষক ও ৩০ জন করে শিক্ষক ৬ দিনের জন্য এ ট্রেনিংয়ে অংশ নেয়। এ সময় কো-অর্ডিনেটর, প্রশিক্ষক, অংশগ্রহণকারী ও শিক্ষা কর্মকর্তার সম্মানী, খাবার ভাতা, মনিহারী, সাপোর্ট ভাতা, যাতায়াত ভাতা ও বিবিধ খরচ সহ প্রতি ব্যাচের জন্য সর্বমোট ২ লক্ষ ৪০ হাজার ৩শ ৮০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে দায়িত্বরত ইন্সট্রাক্টর শাহিনূর আক্তার বিভিন্ন খাত দেখিয়ে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা কেটে রাখেন। অভিযোগ রয়েছে, ভেদরগঞ্জ উপজেলা ইউআরসি থেকে দুর্নীতি করে শাহিনূর আক্তার মালিক হয়েছেন অঢেল অর্থ-সম্পত্তির। আর এসব বিষয়ে বলতে গেলে তিনি শরীয়তপুরের মেয়ে বলে শিক্ষকদের হুমকি দেন।
৬৪ নং চরফিলিজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর মিয়া বলেন, ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর ট্রানিং শেষে আমাদের কাছ থেকে ৫হাজার ৮শ ৮০ টাকার স্বাক্ষর রাখেন কিন্তু দেন ৫হাজার ২শ টাকা। রাটিং প্যাড, কলম ও বিবিধ খরচের জন্য ২হাজার ৬শ টাকা বরাদ্দ থাকলেও তিনি সেসব ঠিকমত দেন না। আর ৮০টাকা নাস্তার বিল রেখে সর্বোচ্চ ২৫ টাকার নাস্তা দেন। আমরা তার এসব অনিয়ম দুর্নীতি থেকে মুক্তি চাই।
৮নং তারাবুনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাবারক হোসেন বলেন, শাহিনূর ম্যাডাম অডিটের কথা বলে প্রশিক্ষক ও অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে ২শ করে টাকা রেখে দেন। এছাড়া অতিথিদের গিফট দেয়ার নাম করেও টাকা রাখেন। কিন্তু বেশীরভাগ সময় অতিথিরা আসেন না। এছাড়া তিনি ঠিকমত অফিসেও আসেন না।
সহকারী শিক্ষক স্বপন মিয়া ও খলিল মিয়া বলেন, আমাদের ব্যাগের জন্য ৫শ টাকা বরাদ্দ থাকলেও শাহিনূর আপা ১শ ৫০ টাকা দামের একটি নিম্নমানের ব্যাগ দিয়ে তিনি বাকী টাকা আত্মসাৎ করেন। তার বাসায় তৈরী খাবার খেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এক কথায় তিনি তার ইচ্ছেমত অফিস পরিচালনা করেন। তার অনিয়মের কোন শেষ নেই।
এ বিষয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর শাহিনূর আক্তার বলেন, আমি কোন অনিয়মের মধ্যে নাই। আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব তানভীর আল-নাসীফ ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, শাহিনূর আক্তারের বিরুদ্ধে শিক্ষকরা ডিজি বরাবর একটি অভিযোগ করেছে। তার অনুলিপি পেয়েছি।
এ বিষয়ে জেলা পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট মোঃ করম আলী বলেন, আমি এ অভিযোগের একটি অনুলিপি পেয়েছি। যেহেতু আমাদের উপরস্থ কর্মকর্তার বরাবর অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তারাই সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন।
আপনার মন্তব্য