মেহেদী হাসান সোহাগ
বাবা আদর করে নাম রেখেছিলেন ময়ূরজান। সেই ময়ূরজান এখন থাকে রাস্তায় রাস্তায়। বয়স প্রায় ৭০। নামটাও সময় আর পরিবেশের কারণে হয়ে গেছে ময়রজান। ময়রজানের বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের বাহেরচর কাতলা গ্রামে। স্বামী ওমর আলী শিকদার প্রায় ৩০ বছর আগে মারা গেছে। এই ত্রিশ বছরেও ভাগ্যে জোটেনি একটি বিধবা কার্ড।
ময়রজানের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ময়রজানের দুই মেয়ে হাজেরা আক্তার চম্পা ও বিলকিস আক্তার। তাদের দু’জনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। বিলকিসের বয়স যখন ৩ মাস তখন মারা গেছে ময়রজানের স্বামী। সেই সময় অনেক কষ্ট করে বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করে মেয়েদের বড় করে বিয়ে দেন। মেয়েদের স্বামী ঢাকায় রিকসা চালায়। তাদেরও সংসারে কষ্ট। তাই মাকে কোন সহযোগিতা করতে পারে না। তাছাড়া বয়স আর বিভিন্ন অসুখের কারণে কাজ করে খেতে পারে না ময়রজান।
বেঁচে থাকার তাগিদে একা অসহায় ময়রজান এ বাড়ি সে বাড়ি থেকে ভিক্ষা করে যা পায় তাই দিয়েই কোন রকমভাবে বেঁচে আছেন। চোখে কম দেখা ও প্রচণ্ড মাথা ব্যথা নিয়ে নিঃস্ব এই বিধবা থাকে রাস্তায় রাস্তায়। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বরদের কাছে গিয়েও ভাগ্যে জোটেনি একটি বিধবা কার্ড বা বয়স্ক ভাতার কার্ড। এমনকি কখনও পাইনি দুঃস্থদের জন্য দেয়া সরকারি চালের কার্ড। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে শুধু চোখের জল ফেলে। গায়ে ময়লা সুয়েটার ও ছিড়া কাপড় জড়িয়ে কোন রকমভাবে দিন কাটে তার।
সাংবাদিক পেয়ে তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘ওই চেয়ারম্যান, মেম্বরের কাছে অনেক গিয়্যাছি। কিন্তু একখান বিধবা কার্ড দেয় নাই। কত মানুষকে চাল দিছে। মোরে দেয় নাই। তাই পথে পথে থাহি। ভিক্ষা কইরা যা পাই, তাই দিয়া কোন রকমভাবে বাইচা আচি। টাকার জন্য ডাক্তার দেখাইতে পারিনা।
এ ব্যাপারে মাদারীপুর জেলা সমাজসেবা অফিসার (রেজিস্ট্রার) আফজাল হোসেন আকন বলেন, ‘তার বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। যখন বিধবা কার্ড করার সময় আসে, তখন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নামের তালিকা চাওয়া হয়। যদি তখন তার নাম আসে তবে অবশ্যই কার্ড করে দিবো। যদি চেয়ারম্যান-মেম্বার নাম না দেয় তবে আমার সাথে যোগাযোগ রাখলে, আমি ব্যবস্থা করে দিবো।’
আপনার মন্তব্য