
কাজী নজরুল ইসলাম
শরীয়তপুরের সিনিয়র সাংবাদিক কাজী নজরুল ইসলাম কিছু দিন পূর্বে শরীয়তপুরের প্রেসক্লাব ও প্রেস পলিটিক্স নিয়ে কিছু কথা বলবেন বলে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। সেই স্ট্যাটাসের প্রেক্ষিতে অনেকেই ইতিবাচক মতামত দিয়েছিলেন। আপনাদের ইতিবাচক মতামতের প্রতি সম্মান রেখে কিছু সত্য এবং বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রদানের চেষ্টা করেছেন সাংবাদিক কাজী নজরুল ইসলাম।
আশা রাখছি এবারও আপনারা আপনাদের সুচিন্তিত মতামত জানাবেন। এক দিনেই বা এক পর্বে পুরোটা লেখা সম্ভব হচ্ছে না। তাই একাধিক পর্বের মাধ্যমে পুরোটা জানানোর চেষ্টা করছি। আজ প্রথম পর্ব প্রকাশ করা হচ্ছে।
আমরা শরীয়তপুরবাসী এক সময়ে ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর মহকুমার বাসিন্দা ছিলাম। ১৯৭৭ সালের ৪ নভেম্বর আমরা শরীয়তপুর মহকুমা লাভ করি। মাদারীপুরের শিবচর থানার বাহাদুরপুরের সুফি পুরুষ হাজী শরীয়তুল্লাহর নামানুসারে পালং থানা সদরকে মহকুমা সদরে পরিনত করা হয়। ১৯৮৪ সালের পহেলা মার্চ মহকুমা থেকে আমরা জেলায় উন্নিত হই। মহকুমা ও জেলা প্রতিষ্ঠার সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আমি সে বিষয়ে আলোকপাত করছি না।
মহকুমা প্রতিষ্ঠার পর থেকে শরীয়তপুরবাসী নিজস্ব পরিচয়ে সমৃদ্ধ হতে চেষ্টা করতে থাকেন। এ সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও প্রশাসনিক অগ্রগতির পাশাপাশি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যমকেও প্রতিষ্ঠা দিতে কাজ করতে থাকেন কিছু মেধাসম্পন্ন ব্যক্তি। তখনও গণমাধ্যম বা তথ্য প্রযুক্তি ততোটা ব্যাপকতা লাভ করেনি, সে কথা আমাদের সকলেরই জানা। তবুও এই জেলার কতিপয় আলোকিত সন্তানেরা চেষ্টা করেন শরীয়তপুরে সাংবাদিকতা পেশাকে প্রসারিত করতে।
সত্তুরের দশকের শেষ ভাগ থেকে অর্থাৎ মহকুমা প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই পালং থানার নুর মোহাম্মদ কোতয়াল, মরহুম এ্যাভোকেট হাবিবুর রহমান শাহজাহান খান (বর্তমানে মাদারীপুর), বীর মুক্তিযোদ্ধা জলিলুর রহমান, মজিবুর রহমান মাদবর, আব্দুর রহিম ছৈয়াল, হযরত আলী, আব্দুল মজিদ মাদবর প্রমূখ, নড়িয়ার আক্তার হোসেন, সুলতান মাহমুদ সিমন, জাজিরার গোলাম হোসেন হযরতী, ভেদরগঞ্জের মোস্তাক হোসেন মোবারকি, সৈয়দ আমির খসরু সহ এমন অনেকে সাংবাদিকতায় এগিয়ে আসেন। তাদের বেশীর ভাগই শরীয়তপুর থেকে কাজ করেছেন, কেউ কেউ আবার ঢাকা ভিত্তিক ভালো অবস্থানে ছিলেন। তবে, পেশা হিসেবে তাদের অনেকেই এখানে স্থির থাকেননি। এ সকল উদ্যোমী পুরুষের অনেকে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন পরপারে। জীবন এবং জীবিকার প্রয়োজনে কেউ কেউ ভিন্ন পেশায় স্থানান্তরিত হয়েছেন। এখনো টিকে আছেন তাদের দু’চার জন।
৮০’র দশকের মধ্য ভাগ থেকে অনেক তরুন শরীয়তপুরে সাংবাদিকতা পেশায় অন্তর্ভূক্ত হতে থাকেন। সময় যতই গড়িয়েছে স্বাধীন ও মহৎ এই পেশাটি সময়ের সাথে সাথে তার ব্যাপ্তি প্রসারিত করতে থেমে থাকেনি। তৎসময়কার সংবাদ কর্মীদের উপলদ্ধিতে নিজেদের সংগঠিত হওয়ার বিষয়টিও নাড়া দেয়। তারা উদ্যোগী হন নিজেদের একটি ঠিকানা খুঁজে নিতে, এগিয়ে আসেন একটি মজবুত নীড় নির্মাণে। যেমন চিন্তা তেমনই কাজ। ১৯৮২ সালে শরীয়তপুর মহকুমায় প্রথম প্রেসক্লাব গঠন করা হয়। সেখানে একটি সাপ্তাহিক ইংরেজী পত্রিকার মহকুমা প্রতিনিধি আব্দুর রহিম সভাপতি এবং সাপ্তাহিক খবর ও দৈনিক বাংলার প্রতিনিধি মজিবুর রহমান মাদবর সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। শুরু হয় শরীয়তপুর প্রেস ক্লাবের পথ চলা।
শরীয়তপুর প্রেস ক্লাবের প্রথম কমিটিতে (সম্ভবত) সর্বসাকুল্যে ৭/৮ জন সদস্য ছিলেন। এর দুই বছর পরেই আমরা ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ মহকুমা থেকে জেলায় উন্নিত হই। একই বছর একই নেতৃত্বে গঠিত হয় শরীয়তপুর প্রেস ক্লাবের দ্বিতীয় কমিটি। এরপর সাংবাদিকতা এবং সংবাদ পত্রের প্রসার বাড়লেও বাড়েনি শরীয়তপুর প্রেস ক্লাবের গতি। ১৯৮৪ সালের পর টানা ১৬ টি বছর কেউ আর প্রেস ক্লাবের খোঁজ রাখেননি।
চলবে….
আপনার মন্তব্য