
শরীয়তপুর সংবাদদাতা
শরীয়তপুর জেলার ইটভাটা মালিকরা ইটের সাইজ ছোট করে ক্রেতাদেরকে ঠকাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শরীয়তপুর জেলার সদর, জাজিরা, গোসাইরহাট, ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা এবং নড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটা ঘুরে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতারা প্রতি হাজার ইটে কমপক্ষে ২শ ৮৪টি সমপরিমাণ ইট কম পাচ্ছেন।
এদিকে, ক্রেতাদের নিয়ম মাফিক ইট পাওয়ার ক্ষেত্রে ইটভাটায় যাদের তদারকি করার কথা সে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ বিষয়ে কার্যকরী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তারা কি এক অদৃশ্য কারণে নির্বিকার রয়েছেন। যার প্রেক্ষিতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত শাখার সূত্রে জানা যায়, জেলার ছয়টি উপজেলায় ৪৯টি ইটের ভাটা রয়েছে। তার মধ্যে শরীয়তপুর সদর উপজেলায় ২০টি, জাজিরা উপজেলায় ৮টি, নড়িয়া উপজেলায় ৭টি, ভেদরগঞ্জ উপজেলায় ৬টি, ডামুড্যা উপজেলায় ২টি এবং গোসাইরহাট উপজেলায় ৬টি ইটের ভাটা রয়েছে।
অতিসম্প্রতি সরেজমিনে শরীয়তপুরের সদর উপজেলার চর ডোমাসার গ্রামের মেসার্স যমুনা ব্রিক ম্যানুফ্যাক্সারিং এবং মেসার্স মেঘনা ব্রিক্স, জাজিরা উপজেলার মিয়াচাঁন মুন্সীকান্দি গ্রামের মেসার্স এমবিএম ব্রিক্স, কাউয়াদি গ্রামে মেসার্স যমুনা ব্রিক্স এবং বড় গোপালপুর গ্রামের মেসার্স হাওলাদার ব্রিক্স এবং নড়িয়া উপজেলার কালিকা প্রাশাদ গ্রামের মেসার্স মক্কা ব্রিক ফিল্ডে ঘুরে এ সকল ইটের ভাটার ইটের সাইজ ছোট করার বিষয়টি ধরা পড়ে।
এসব ইটভাটাতে দেখা গেছে, প্রত্যেকটি ইটের ভাটায় প্রস্তুতকৃত ইটের সাইজ রয়েছে দৈর্ঘ্যে ২২ সেন্টিমিটার, প্রস্থে ৯ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতায় ৫ সেন্টিমিটার। সরকারি বিধি মোতাবেক প্রতিটি ইটের সাইজ হবে দৈর্ঘ্যে ২৪ সেন্টিমিটার, প্রস্থে ১১ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতায় ৭ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ প্রত্যেকটি ইটে কমপক্ষে ২ সেন্টিমিটার করে কম রয়েছে। ইটের আকারে ছোট হওয়ায় কারণে একজন ক্রেতা প্রতি হাজার ইটে ২শ ৮৪টি ইট কম পাচ্ছে। শরীয়তপুরের ইটের ভাটা মালিকরা ক্রেতাদেরকে দীর্ঘদিন ধরে ইট কম দিয়ে ঠকাচ্ছেন।
শরীয়পুর সদর উপজেলার যমুনা ব্রিক ম্যানুফ্যাচারিং থেকে ইট কিনেছেন একই উপজেলার আলমগীর হোসেন হাওলাদার। তিনি বলেন, আমি ভবন তৈরির জন্য ২০ হাজার ইট কিনে ঠকেছি, ইটের সাইজ অনেক ছোট। এজন্য ভবন তৈরিতে বেশি ইট লাগবে। কিন্তু সরকারি নিয়ম অনুসারে ইট তৈরি করা হলে আরও কম ইট লাগত।
অন্যদিকে নড়িয়া উপজেলার আব্দুল আজিজ পেদা নামের এক প্রবাসী নিজের বাড়ি করার জন্য একই উপজেলার কালিকাপ্রাশাদ গ্রামের মক্কা ব্রিক ফিল্ড থেকে ইট কিনতে গিয়ে ইটের সাইজ ছোট দেখে তিনি ইট না কিনেই চলে আসেন। জানতে চাইলে আব্দুল আজিজ বলেন, নিজের বাড়ির জন্য ইট কিনতে গিয়ে এতো ছোট ইট আমার পছন্দ হয়নি। তাই চলে এসেছি। আমি পাশের মাদারীপুর জেলা অথবা চাঁদপুর জেলা থেকে ইট কেনার সিদ্ধান নিয়েছি।
এ ব্যাপারে শরীয়তপুরের ইটের ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবদুল জলিল খান বলেন, ইট তৈরি করার জন্য সরকারি ভাবে যে নির্দেশনা রয়েছে আমারা সেই নির্দেশনা অনুসারে ফর্মা দিয়ে ইট তৈরি করছি। কিন্তু ইট পোড়ানোর পর একটু ছোট হচ্ছে। আগামীতে নতুন ফর্মা দিয়ে ইট তৈরি করা হবে।
এ ব্যাপারে শরীয়তপুর জেলার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সুজন কাজী বলেন, আমি এখানে আসার পর দেখেছি এখানকার ইটগুলো তুলনামূলকভাবে আকারে ছোট। আমি সেজন্য ইট ভাটার মালিকদেরকে ডেকেছিলাম। তারা এক মাসের সময় নিয়েছে। এক মাসের মধ্যে সরকারি বিধি মোতাবেক ইট তৈরি করবে বলে আমাকে কথা দিয়েছে। যারা সরকারি বিধি অনুয়ায়ী ইট তৈরি করবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান সুজন কাজী।
আপনার মন্তব্য