
স্টাফ রিপোর্টার
শরীয়তপুরে কোয়ারেন্টাইনের কথা কাগজে কলমে উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে তার কোন মিল নেই। চলছে শুধুই তামাশা। কোথাও ভবন থাকলেও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের প্রস্তুতি নেই। শরীয়তপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছেন, কোন রোগী সন্দেহ হলেই প্রস্তুত করা হবে এসব কোয়ারেন্টাইন।
চিকিৎসকের সুরক্ষা উপকরণ হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করা হলেও তাতে নেই চশমা ও বুট। এতে করে কোন কাজেই আসবে না রোগী এবং চিকিৎসকের সুরক্ষা ব্যবস্থা। সোমবার পর্যন্ত ৫শ ২২ জন প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার দাবি করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। এদিকে ১০ প্রবাসী সরকারী নির্দেশ অমান্য করায় জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র থেকে জানা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করার জন্য শরীয়তপুরে ১শ শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। নড়িয়া উপজেলায় দুটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ২০ শয্যা, জাজিরা উপজেলায় ৪০ শয্যা। যার মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০টি এবং দুটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ২০টি, ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ শয্যা এবং ডামুড্যা উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ শয্যার তালিকা রয়েছে। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড রয়েছে। চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ ২শ প্যাকেট রয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে কাজ করার জন্য প্রতি হাসপাতালে একটি করে টিম রয়েছে।
সরেজমিনে নড়িয়ার উপজেলার রাজনগর ইউিনিয়নের মোড়লপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায় ভবনটির কাজই এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। ভেতরে অপরিস্কার অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। জানালার কপাট নেই। ১০ শয্যার কোয়ারেন্টাইনের জন্য নেই আসবাবপত্র বা আনুসাঙ্গিক জিনিপত্র।
স্থানীয়রা জানায়, স্বাস্থ্য বিভাগের কেউই পরিদর্শনে আসেনি। ক্লিনিকটিকে কোয়ারেন্টাইন ঘোষণা করা হয়েছে এমন তথ্য তারা জানেন না।
ইতালি প্রবাসী অধ্যুসিত অধিক ঝুঁকিতে থাকা নড়িয়ার প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন রাহাপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির কাজ শেষ। কিন্তু কোয়ারেন্টাইন করার মতো অবস্থায় নেই।
মোড়লকান্দি গ্রামের স্বাস্থ্যকর্মী হযরত আলী মোড়ল বলেন, আমাকে অফিস থেকে বলছে, এখানে একটা নেম প্লেট দেবে। এখানে লাগইয়্যা দিমু যাতে জনগন বুঝতে পারে এটা কমিউনিটি ক্লিনিক। কিন্তু এখানে যে লোক রাখমু অহন তরি আমাগো বেড নাই, জানালার কপাট লাগানো নাই। এক কাথায় লোক রাহার মতো পরিবেশ নাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাহাপাড়ার অপর আর একজন বলেন, রোগী রাখার এসব স্থাপনা গুলো যদি প্রস্তুত থাকতো তাহলেও তো আর ঢাকায় নিয়ে যাওয়া লাগতো না। নামে থাকলেও তো হবে না, এগুলো কাজেও লাগাতে হবে।
সিভিল সার্জন যেভাবে বলেছেন, জাজিরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে তার কোন মিল পাওয়া যায়নি। ২০ শয্যার প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে রয়েছে তার উল্টা। চার তলার ভবনের নির্ধারিত তলায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মানুষ থাকার কোন পরিবেশ নেই। প্রত্যেকটি কক্ষ প্রচুর নাংরা। সেখানে বাসা বেঁধেছে পোকা মাকড় আর আরশোলায়।
জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাহমুদুল হাসান বলেন, কোয়ারেন্টাইনটি হাসপাতালে করার কথা ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। ভবনের চতুর্থ তলায় ২০ টি বেডের এ্যারেজমেন্ট আমরা করতেছি। প্রয়োজন হলেই আমরা তা ব্যবহার করতে পারবো।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মেডিকেল অফিসার ডাঃ শাহিনুর নাজিয়া বলেন, চিকিৎসকদের সুরক্ষা উপকরণের সব আইটেম আসেনি। চশমা ও বুট এখনও বাকি। এতে চোখ পা খোলা থাকছে সেখান দিয়েও সংক্রমিত হতে পারে। যার কারণে পরিপূর্ণভাবে এটা নিরাপত্তার দিতে পারবে না।
শরীয়তপুর সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুলাহ আল মুরাদ বলেন, শরীয়তপুরের জন্য ১শ জন লোককে কোয়ারেনটাইনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদি সেগুলো প্রস্তুত করা না হয়ে থাকে তাহলে বিষয়টি আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখবো। সুরক্ষা ব্যবস্থা পর্যপ্ত রয়েছে। আরও নতুন চাহিদা পাঠানো হয়েছে। সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি।
আপনার মন্তব্য