স্টাফ রিপোর্টার
পেয়াঁজের দাম ভালো থাকায় মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই শরীয়তপুরের কৃষকরা অপরিপক্ক পেয়াঁজ তুলে বিক্রি করে দিচ্ছেন। গত বছর ভরা মৌসুমে পেয়াঁজের দাম কম থাকায় লোকসান গুনতে হয়েছে তাদের। এ বছর পেয়াঁজের দাম বেশী থাকায় অপরিপক্ক পেয়াঁজ তুলে আগাম বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে তারা গত বছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। এদিকে কৃষি বিভাগ বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। আগাম পেয়াঁজ তোলার ফলে একই জমিতে নতুন ফসল করার সুযোগ পাচ্ছেন।
গত অক্টোবর মাস থেকে পেয়াঁজের ঝাঁজ যেভাবে বেড়ে ছিলো, ঠিক সেই মুহুর্তে শরীয়তপুরের কৃষকরা আগাম পেয়াঁজ তুলে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছেন মানুষকে। গত বছর কৃষকদের যে পরিমান লোকসান হয়েছে এ বছর আগাম পেয়াঁজ বিক্রি করে অনেক কৃষক ব্যাংক লোন পরিশোধ করতে পেরেছেন। বর্তমানে পেয়াঁজ তোলার মৌসুম না হলেও কৃষকরা একমাস আগেই পেয়াঁজ তোলা শুরু করেছেন। ক্ষেত থেকে কৃষকরা মুরিকাঁটা কাচাঁ পেয়াঁজ বিক্রি করছেন কেজি প্রতি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। এতোটা উচ্চ মূল্য পাওয়ায় কৃষকদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক।
শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর শরীয়তপুর জেলার ৬টি উপজেলায় ৩হাজার ২শত ৫০ হেক্টর জমিতে পেয়াঁজের আবাদ হয়েছে। জেলার ৬টি উপজেলার মধ্যে জাজিরা উপজেলায়ই সব চাইতে বেশী পেয়াঁজের আবাদ হয়। এ বছর জাজিরায় ২হাজার ২শত ৩৬ হেক্টর জমিতে পেয়াঁজের আবাদ হয়েছে।
এ বছর কৃষকের বিঘা প্রতি জমিতে পেয়াঁজ আবাদে খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। ভরা মৌসুমে বিঘা প্রতি ফলন হওয়ার কথা ৬০ থেকে ৬৫ মন। কিন্তু ভরা মৌসুমের আগে পেয়াঁজ তুলে ফেলায় তার ফলন পাওয়া যাচ্ছে অর্ধেকেরও কম। আর এ অর্ধেকের কম পেয়াঁজ তুলে অনেক বেশী লাভবান হয়েছেন কৃষকরা। অন্যান্য বছর ভরা মৌসুমে এক টন পেয়াঁজের সর্বোচ্চ মূল্য ছিল ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এ বছর আগাম পেয়াঁজ তুলে তার দাম পাওয়া যাচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।
এ ব্যাপারে জাজিরা উপজেলার পেয়াঁজ চাষী মোকছেদ মোল্যা, আবুল কালাম বেপারী, শিপন আক্তার ও সুরুজ মিয়ার সাথে আলাপ কালে তারা বলেন, গত বছরের লোকসান পোষাতেই এবার তারা অপরিপক্ক পেয়াঁজ তুলে বাজারজাত করছেন। কারণ, ভরা মৌসুমে সরকার বিদেশ থেকে পেয়াঁজ আমদানী করে। ফলে তারা ন্যায্য মূল্য পায় না। এভাবে আগাম পেয়াঁজ তোলায় ফলন হচ্ছে অর্ধেক। কিন্তু, দাম পাওয়া যাচ্ছে ৭ থেকে ৮ গুন বেশী। তারা আগাম পেয়াঁজ তুলে একই জমিতে আবার পেয়াঁজ লাগাবেন। আবার কেউ উচ্ছে, মিষ্টি কুমড়াসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ করবেন বলে জানিয়েছেন।
স্থানীয় পালং বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা মোখলেসুর রহমান এবং ইসাহাক সরদার জানান, বাজারে নতুন পেয়াঁজ আসতে শুরু করেছে। দেশী পেয়াঁজ বাজারে আসায় বিদেশ থেকে আমদানি করা পেয়াঁজের চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে বিদেশী পেয়াঁজ প্রতি কেজি ৫৫ টাকা এবং দেশী নতুন পেয়াঁজ ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুর রহমানের সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, গত বছর পেয়াঁজের আবাদ করতে গিয়ে কৃষকদের অনেক লোকসান হয়েছে। তাই গত বছরের তুলনায় এ বছর কম জমিতে পেয়াঁজের আবাদ হয়েছে। এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় এবং কৃষি বিভাগের পূর্ণাঙ্গ সহায়তায় পেয়াঁজের আবাদ ভালো হয়েছে। কিন্তু এবার দেশী ও আন্তর্জাতিক বাজারে পেয়াঁজের দাম বেশী থাকায় কৃষকরা আগাম পেয়াঁজ তুলে বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলন অর্ধেক হলেও তারা বিঘা প্রতি ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা মুনাফা পাচ্ছেন। আমরা এ বিষয়টিকে ইতিবাচক ভাবেই বিবেচনা করছি। তাছাড়া অপরিপক্ক পেয়াঁজ তুলে একই জমিতে নতুন করে পেয়াঁজের চারা রোপন করার পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়া, উচ্ছের মত অন্যান্য সবজি চাষ করার সুযোগ পাচ্ছেন তারা।
আপনার মন্তব্য