স্টাফ রিপোর্টার
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড় গোপালপুর ইউনিয়নের কালাই রাড়ি কান্দি গ্রামের হাবিবুর রহমান সরদারের ছেলে মাহবুব সরদার (২৫) এর বিরুদ্ধে দশ বছরের এক বাক প্রতিবন্ধিকে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাক প্রতিবন্ধি মেয়েটি তার আপন চাচাত ভাই আবু বকর সরদারের মেয়ে। এদিকে আপোষ মিমাংসার জন্য ধর্ষিতার মা-বাবাকে বাধ্য করছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং ছাত্রলীগের এক প্রভাবশালী নেতা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার বড় গোপালপুর ইউনিয়নের কালাই রাড়ি কান্দি গ্রামের দর্জি দোকানদার আবু বকর সরদারের ১০ বছরের বাক প্রতিবন্ধি কন্যাকে ধর্ষণ করেছে আপন চাচাতো ভাই মাহবুব সরদার। ধর্ষক মাহবুব সরদার একই বাড়ির হাবিবুর রহমান সরদারের ছেলে। বাক প্রতিবন্ধির মা সোমবার সকালে জাজিরা থানায় মামলা করতে গেলে গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান লিটু সরদার তাদের মামলা না করে ফিরে যেতে বলেন। কিন্তু জাজিরা থানার ওসি সবকিছু জানার পর লিখিত আবেদন গ্রহণ করেন। এরপর এস আই দেলোয়ার হোসেকে অভিযোগটি তদন্ত করার দায়িত্ব দেন। কিন্তু সরেজমিনে তদন্ত করার পর কি এক অদৃশ্য কারণে বিষয়টি আর আগায়নি।
ঘটনার দুই দিন অতিবাহিত হওয়ার পর বড় গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লিটু সরদারের বাড়িতে সালিশ বসে। সেখানে ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা আব্দুল হান্নান এবং মাদারীপুর তথ্য অফিসের কর্মচারী আবুল রাড়ি ধর্ষিতার মা-বাবাকে জোর পূর্বক আপোষ মিমাংশা করতে বাধ্য করে।
ধর্ষনের শিকার বাক প্রতিবন্ধির পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আবু বকর সরদারের স্ত্রী নিঃসন্তান ছিলেন। তিনি ঢাকার কেরানীগঞ্জে দর্জির কাজ করেন। আর স্ত্রী বাড়িতে থাকেন। ১৭ বছরের সংসার জীবনে তাদের কোলে কোন সন্তান আসেনি। তাই ১০ বছর আগে এক আত্মীয়ের কাছ থেকে শিশুটিকে দত্তক নিয়ে আপন সন্তানের মমতায় লালন পালন করতে থাকেন।
এক সময় বুঝা যায় মেয়েটি বাক প্রতিবন্ধি। তারপরও তারা বিচলিত হননি। তারা তিন বছর আগে বাক প্রতিবন্ধি শিশুটির পাশাপাশি আর একটি ছেলে শিশুকে দত্তক নিয়ে লালন পালন করছেন। গত রবিবার বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৫ টার দিকে বাক প্রতিবন্ধি শিশুটির মা উঠানে কাজ করছিলেন। তখন বাক প্রতিবন্ধি শিশুটি নিজের ঘরে খেলা করছিল। মায়ের সামনে দিয়েই মাহবুব ঘরে ঢুকে শিশুটিকে ধর্ষণ করে।
শিশুটির মা বলেন, আমি উঠানে কাজ করছিলাম। মাহবুব আমার সামনে দিয়েই আমার ঘরের দিকে যায়। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি সে আমার ঘরেই প্রবেশ করেছে। এর কিছুক্ষন পরই ঘরের ভেতর থেকে আমার মেয়ের চিৎকার আর গোংড়ানোর শব্দ পাই। আমি দৌড়ে ঘরে গিয়ে দেখি বিছানার উপর মাহবুব আমার বোবা মেয়েটির গলা চেপে ধরেছে। তার পরিধানে কোন পোশাক ছিল না। আমি এই অবস্থা দেখে চিৎকার করলে মাহবুব ঘর থেকে পালিয়ে যায়। বিষয়টি আমি বাড়ির লোকদের দেখাই এবং জানাই। এরপর কিনাই সরদারের ছেলে ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগ নেতা হান্নান সরদার এবং প্রতিবেশী আবুল রাড়ি এসে আমাদেরকে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন।
সোমবার সকালে আমার মেয়ের ঔষধ কেনার কথা বলে আমি আর আমার দেবর বেলালকে নিয়ে জাজিরা থানায় যাই। থানার ওসি সাহেবকে সবকিছু খুলে বলি। ওসি সাহেব তখন থানার একজন লোক দিয়ে আমাকে একটি দরখাস্ত লিখিয়ে দেন। তার পর শুনেছি থানা থেকে দারোগা আমাদের এলাকায় গিয়ে তদন্ত করেছেন। আমরা মঙ্গলবার রাতে চেয়ারম্যান লিটু সরদারের বাড়ি গেলে আমাদেরকে আপোষ মিমাংশা হতে বাধ্য করে। সেখানে আমার স্বামী উপস্থিত থাকলেও তাকে কোন কথা বলতে দেয়নি।
মেয়েটির চাচা বেলাল সরদার বলেন, আমার ভাতিজীকে রবিবার বিকেলে ধর্ষণ করার পর সোমবার সকালে আমি আমার ভাবীকে নিয়ে জাজিরা থানায় যাই অভিযোগ দাখিল করতে। থানায় যাওয়ার পর আমাদের চেয়ারম্যান লিটু সরদার আমাকে বার বার ফোন করে থানা থেকে ফিরে যেতে বলেন।
পরের দিন চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে আপোষ মিমাংসা করা হয়েছে। মাহবুবকে ২৫ জুতো পেটা এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন সালিশরা। কিন্তু তার পরেও আমরা শান্তিতে নেই। এখন আমরা খুব আতংকে আছি। কারো কাছে মুখ খুলতে আমাদের নিষেধ করা হয়েছে। এমনকি আমার ভাবীর মোবাইল নাম্বারও বন্ধ করে রাখতে বলেছে ছাত্রলীগ নেতা হান্নান সরদার।
ঢাকা কলেজের সাউথ হল শাখা ছাত্রলীগের আহবায়ক আব্দুল হান্নান বলেন, ঘটনা যাই হোক এটা থানা পুলিশ জানা জানি হলে অনেক বড় আকার ধারণ করবে। তাই এক বাড়ির লোক হিসেবে আপোষ করিয়েছি।
বড় গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান লিটু সরদার বলেন, আমি এ বিষয়ে আগে কিছুই জানতাম না। আমাকে ওই পরিবারের একজন লোক মালেশিয়া থেকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানায়। এরপর আমি কারো দায়িত্ব নেইনি। আমার কাছে সবাই সমান। আমি ভোটের রাজনীতি করি। সকলের ভোটই আমার দরকার হয়। তারা মামলা করলেও আমার কোন আপত্তি নেই। আর আপোষ হলেও কোন আপত্তি নেই।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ এনামুল হক বলেন, মেয়েটির মা আমার কাছে এসেছিল। তার কথা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় আমি একজন এস আইকে পাঠিয়ে খবর নিয়েছি। যতটা জানতে পেরেছি, উভয় পক্ষই পারিবারিক ভাবে মিমাংসা করে নিয়েছে। পরবর্তিতে কেউ আর কোন অভিযোগ নিয়ে আসেনি।
শরীয়তপুরে ১০ বছরের বাক প্রতিবন্ধিকে মেয়েকে ধর্ষণ
মার্চ ১৯, ২০১৮ , ২৩:৩৮
আপনার মন্তব্য