
জান্নাতুল শাহনাজ
সখিপুরে প্রতারণা করে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির (এসএমসি) সভাপতির দায়িত্ব দখল করেছেন মাহাবুব আলম আক্তার সরদার নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি তার ২ সন্তানকে ভেদরগঞ্জ উপজেলার ৪৭ নং সখিপুর শরীফিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতারণামূলক ভাবে ভর্তি দেখিয়ে প্রথমে সদস্যপদ অর্জণ করেন। পরবর্তীতে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতিও হয়েছেন তিনি। কখন কীভাবে কমিটি হয়েছে এবং গঠিত কমিটির মেয়াদই কতো দিন তা দায়িত্বরত প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক, শিক্ষা অফিসার, শিক্ষার্থী অভিভাবক ও স্থানীয়রা জানেন না।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, এসএমসি’র সভাপতি হতে হলে প্রথমে তাকে অভিভাবক বা অন্য কোন উপায় সদস্য পদ লাভ করতে হবে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও একজন সহকারী শিক্ষক প্রতিনিধিসহ ইউপি মেম্বার, দাতা সদস্য ও বিদ্যোৎসাহী সদস্যের ভোটে এসএমসির সভাপতি নির্বাচিত হবে। এসএমসি’র সভাপতি যদি অভিভাবক সদস্য হিসেবে ভোটার হওয়ার যোগ্যতা লাভ করে তাহলে তার সন্তানকে সেই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে হবে।
স্থানীয়রা জানায়, ভেদরগঞ্জ ৪৭ নং সখিপুর শরীফিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কখন কমিটি গঠন হয় আবার কখন কমিটির মেয়াদ শেষ হয় তার কিছুই তারা জানতে পারে না। প্রধান শিক্ষকের যোগসাজসে আক্তার সরকারকে এসএমসির সভাপতি করে সকল আয়-ব্যয় লুটপাট করে খায়। এই কমিটির দ্বিতীয় মেয়াদেও বিদ্যালয়ের অবকাঠামোর কোন উন্নতি, পাঠদানের উন্নয়ন বা সন্তোষজনক কোন পরীক্ষার ফলাফল পরিলক্ষিত হয়নি। কমিটিতে কে বা কারা সদস্য তাও তারা জানেন না। এই বিষয়ে প্রধান শিক্ষকও কোন তথ্য প্রকাশ করেন না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোর্শেদা আক্তার প্রথমে এসএমসি’র সভাপতিকে রক্ষা করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বলেন, সভাপতির ছেলে ইছান সরকার দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে তার শ্রেণী রোল দুই ও আশরাফুল (ইমন সরকার) চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে তার শ্রেণী রোল ৩২। ছেলেদের ভর্তি করার কারণেই আক্তার সরকার এসএমসি’র সভাপতি হয়েছেন। সভাপতির ছেলেরা এই বিদ্যালয়ে নিয়মিত পড়াশোনা করেন।
ইতোপূর্বে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে সভাপতি আক্তার সরকারের ছেলে ইছান সরকার হাজী শরীয়তুল্যাহ মডেল স্কুলে (কিন্ডার গার্টেন) দ্বিতীয় শ্রেণীর নিয়মিত ছাত্র। ওই বিদ্যালয়ে ইছান সরকারের শ্রেনী রোল ৯। অপর ছেলে ইমন সরকার সখিপুর দারুল জান্নাত মাদ্রাসয় কমপ্লেক্সে পড়াশোনা করেন। ৪৭ নং সখিপুর শরীফিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোর্শেদা আক্তারকে বিষয়টি অবগত করার পরে তিনি প্রকৃত সত্য ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে প্রকাশ করতে শুরু করেন।
তখন তিনি বলেন, একই ছাত্র একই সাথে দুই বা ততোধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে। ধরেন কেজি স্কুলে ক্লাস ৮টায় শুরু হয়ে সাড়ে ১০টায় শেষ হয়। তার পরে আমার বিদ্যালয়ে এসে পড়তে পারে। এই বিদ্যালয়ে দুই বছর হল যোগদান করেছি। তবে বিদ্যালয়ে সভাপতির ছেলেদের ভর্তি থাকলেও কোন ক্লাসে পাইনি। অনেক পরীক্ষায় তাদের অংশগ্রহণ করতে দেখেছি। সভাপতির সন্তান বলে তাদের উত্তীর্ণ করে পরবর্তী ক্লাসে ভর্তি করে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হয়। তাছাড়া এলাকায় তাদের প্রভাবও আছে। এখন যে পরীক্ষা চলছে তাতে সভাপতির কোন ছেলেই অংশগ্রহণ করেননি। তাদের হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত (এ্যাবসেন্ট) দেয়া আছে।
কবে এসএমসি গঠিত হয়েছে তা প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটির কোন কাগজ, তালিকা বা রেজুলেশন আমার কাছে নাই। এই সকল কিছু সভাপতি আক্তার সরকারের কাছে আছে। অথচ কমিটির তালিকা ও রেজুলেশন সংক্রান্ত কাগজপত্র থাকবে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ও উপজেলা শিক্ষা অফিসে। কমিটির মেয়াদইবা কতদিন আছে তাও এই প্রধান শিক্ষক জানেন না। তিনি যোগদানের সময় কমিটির কাগজপত্র বুঝেও নেননি বলে জানান।
তিনি আরও জানান, তার পূর্ববর্তী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সবিতা রাণী বর্মণ এই বিষয়ে বলতে পারবে। সেই ভারপ্রাপ্ত পূর্ববর্তী প্রধান শিক্ষক সবিতা রাণী বর্মণের সাথে আলাপ কালে বলেন, সাত দিনের জন্য প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছি। বর্তমান প্রধান শিক্ষক ২ বছরে যা সংগ্রহ করতে পারেনি আমি ৭ দিনে তা কেমনে সংগ্রহ করতাম। আমিও আমার পূর্ববর্তী প্রধান শিক্ষক মারিয়ম আক্তারের কাছ থেকে কমিটির কাগজপত্র বুঝে রাখতে পারিনি। কিভাবে এসএমসি গঠিত হয়েছে বা আদৌ হয়েছে কি না সে ব্যাপারে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এই প্রতিবেদক বিদ্যালয়ে অবস্থানকালে বর্তমান প্রধান শিক্ষক মোর্শেদা আক্তার সভাপতি আক্তার সরকারকে মোবাইল ফোনে সাংবাদিকের উপস্থিতির কারণ সম্পর্কে অবগত করেন। তখন সভাপতি আক্তার সরকার প্রধান শিক্ষককে মোবাইল ফোনেই বলেন সাংবাদিককে কমিটির কোন কাগজপত্র দেখানো যাবে না। শিক্ষা অফিসার চাইলে তাকে দেখাব। পরে প্রধান শিক্ষকের মোবাইল ফোনে সভাপতি প্রতিবেদকের সাথে কথা বলে।
সভাপতি আক্তার সরকার নিজের প্রতারনাকে আড়াল করতে প্রতিবেদকে বলেন, পাশের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গত ২৫ জুন বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছে এবং আদালতেও হাজিরা দিয়েছে। আপনারা সেই অনিয়ম দেখতে পারেন না।আক্তার সরকার প্রতারণার মাধ্যমে এসএমসি’র সভাপতি হওয়াসহ যে সকল অনিয়ম করেছেন তা জানতে চাইলে জবাবে কিছুই বলতে রাজী হয়নি সে।
বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম মশিউর আজম বলেন, আমি ওই ক্লাস্টারে নতুন যোগদান করেছি। এসএমসি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে তাই অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখব।
আপনার মন্তব্য