আবদুল বারেক ভূইয়া
শত বাঁধা বিপত্তিকে উপেক্ষা করে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে ১৮ বছরের শারীরিক প্রতিবন্ধী সিয়াম খান। হাত নেই তারপরও দমিয়ে রাখতে পারেনি সিয়ামকে। অন্যের সহায়তায় (রাইটার দিয়ে) পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি।
সিয়ামের পরিবার সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরের নড়িয়ায় ২০১৭ সালে বাড়ি থেকে জোহরের নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়ার সময় পল্লী বিদ্যুতের ছিড়ে পড়া তারে গুরুতর আহত হয় সিয়াম। তখন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু বিধি বাম। তার দুই হাতেই সংক্রমণ দেখা দেয়। সিয়ামকে বাঁচাতে তাৎক্ষণিকভাবে কবজির ওপর থেকে দুটো হাতই কেটে ফেলেন চিকিৎসকরা। তার জীবনে নেমে আসে গভীর অন্ধকার। কিন্তু তারপরেও থেমে থাকেনি সিয়াম। মনের জোরই তাকে উৎসাহ যোগিয়েছে। অবশেষে তার এই ‘অন্ধকারময়’ জীবনকে জয় করে এ বছর নড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন সিয়াম।
অন্যের ঘাড়ে বোঝা হয়ে থাকতে চান না সিয়াম খান। প্রতিনিয়ত প্রকৃত মানুষ হয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন তিনি। তাই স্বাভাবিক জীবনের পাশাপাশি শুরু করেছেন পড়ালেখা। বড় হয়ে ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) হতে চান তিনি। দাঁড়াতে চান প্রতিবন্ধীদের পাশে।
সিয়ামের মমতাময়ী মা নাজমা বেগম বলেন, ‘পরাজয় ডড়ায় না বীর’ এই কথাটি মাথায় রেখে ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছি। কষ্টের কাছে হার মানব না। সিয়ামের জন্য অনেক কষ্ট হয়। আমি মা হয়ে তার কষ্ট মনেপ্রাণে উপলব্ধি করছি। সমাজে সে অবহেলার পাত্র হয়ে থাকুক এটা আমি কখনোই চাই না। তাই আমার ছেলেকে লেখাপড়া করার জন্য উৎসাহ দিচ্ছি। লেখাপড়া করে বড় হতে আমাদের যতোদূর যাওয়া প্রয়োজন আমরা যাব।
বাবা ফারুক খান বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। ধার দেনা করে সিয়ামের চিকিৎসা করিয়েছি। এ পর্যন্ত তার পেছনে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আর পারছি না। এখন পথে বসেছি। তারপরও ছেলেকে পড়ালেখা করাচ্ছি মানুষের মতো মানুষ হওয়ার জন্য। এদিকে হাইকোর্ট ওই দুর্ঘটনায় দায়ী পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগকে ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশনা দিলেও এখনও সেই টাকা পাইনি। সেই টাকাটা পেলে হয়তো ওর লেখাপড়াটা আরও ভালোভাবে করাতে পারব।’
নড়িয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুল খালেক বলেন, ‘সিয়ামের দুর্ঘটনার পর কলেজ ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা মিলে ওর চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা সহযোগিতা করা হয়েছে। সিয়াম মেধাবী ছাত্র। তার লেখাপড়ার জন্য কলেজ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। আমরা জানি সিয়াম অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করছে। তার ইচ্ছাশক্তি প্রবল। তার পাশে কলেজ কর্তৃপক্ষ থাকবে।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা ইয়াছমিন বলেন, ‘সিয়ামের পড়ালেখার বিষয়ে নড়িয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। লেখার সুবিধার্থে সিয়ামকে একজন রাইটার দেয়া হয়েছে। সিয়াম যাতে সুন্দরভাবে পড়ালেখার করতে পারে সেজন্য ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের সমাজসেবা তহবিল থেকে ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। লেখাপড়ার জন্য সব সময় সিয়ামকে আমরা সহযোগিতা করে যাব।
আপনার মন্তব্য