
স্টাফ রিপোর্টার
পদ্মা সেতুতে যুক্ত হলো আরও একটি স্প্যান। বুধবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল ১০ টায় জাজিরা প্রান্তে ৩৬ ও ৩৭ নম্বর খুঁটির ওপর ধূসর রঙের ‘ঋ-৬’ নামের এই স্প্যান বসিয়ে দেয়া হয়। এই নিয়ে জাজিরা অংশে সেতুটি দৃশ্যমান হলো ৯০০ মিটার। আর মাওয়া প্রান্তে আরও দৃশ্যমান রয়েছে ১৫০ মিটার।
আজ ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও তিন হাজার ১৪০ টন ওজনের প্যানটি বসিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে সেতুর ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর ৫টি প্যান বসানোর মাধ্যমে জাজিরা প্রান্তে পৌনে ১ কিলোমিটার কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। আর আজ ‘ঋ-৬’ স্প্যানটি বসানোর পরে সেতুটির ঐ অংশে ৯শ’ মিটার দৃশ্যমান হলো। এছাড়া মাওয়া প্রান্তের ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটি প্রস্তুত না থাকায় এই প্যানটি (সুপার স্ট্রাকচার) ‘ঋ-১’ আপাতত সেতুর ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের ওপর রাখা হয়েছে। ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটি প্রস্তুত হলে ‘ঋ-১’ স্প্যানটি সরিয়ে বসিয়ে দেওয়া হবে।
এর আগে নাব্য সঙ্কট মোকাবেলার পর মাওয়া কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টায় রওনা হয়ে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে বিকাল পৌনে ৫টায় জাজিরা প্রান্তে স্প্যানটি (সুপার স্ট্রাকচার) পৌঁছায় । তিন হাজার ৬শ’ টন ধারণ ক্ষমতার ক্রেন ‘তিয়ান ই’ স্প্যানটিকে পাজা করে নিয়ে যায়।
পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, স্প্যানটি কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে বসানোর উপযোগী করে বেশ কিছুদিন ধরে ইয়ার্ডের জেটির কাছেই রাখা ছিল। কিন্তু নাব্য সঙ্কটের কারণে এটি নেয়া সম্ভব যাচ্চিল না। কারণ স্প্যান বহনকারী ৩৬শ’ টন ধারণ ক্ষমতার ভাসমান ক্রেনটি চলাচলে পানি যে গভীরতা প্রয়োজন সেতুর চ্যানেলে তা ছিল না। এ কারণে অনবরত ড্রেজিং করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হয়।
মূল সেতুর মোট খুঁটি (পিয়ার) ৪২টি। এর মধ্যে ২০টি দৃশ্যমান রয়েছে। যার ১৬টির কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই দৃশ্যমান হচ্ছে আরও ১১টি খুঁটি। ৬,৭,৮, ৩১ ও ৩২ নম্বর এই পাচঁটি খুঁটিতেই পাইল বসেছে ৩টির বেশি। ৮, ৩১ ও ৩২ নম্বর খুঁটিতে খাঁজকাটা (ট্যাম) পাইল বসানোর কাজ চলমান আছে। আর ২৮ জানুয়ারিতে থেকে ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটিতে আরও ৪টি করে খাঁজকাটা কাটা পাইল বসানো শুরু হচ্ছে। বাকি ছয়টি অর্থাৎ ১০, ১১, ২৬, ২৭, ২৯ ও ৩০ খুঁটিতেও খাঁজকাটা পাইল বসবে। তাই সেতুর মূল ভিতের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। এতে সেতু চালু হওয়ার কাজও এগিয়ে যাচ্ছে।
নদীতে ৪০টি খুঁটির মোট ২৬২টি পাইলের মধ্যে ১৯২টি পাইলের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১৪টি পাইলের বটম সেকশনের কাজ হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই এগুলোর টপ সেকশনের কাজ সম্পন্ন হবে।
এছাড়া ১৭টি স্প্যান প্রস্তুত রয়েছে। প্রস্তুত করা হচ্ছে আরও ১৮টি স্প্যান। সম্পূর্ণ হওয়া এই ৩৫টি স্প্যানের মধ্যে প্রকল্প এলাকায় পৌছেছে ১৯টি স্প্যান। বাকি ১৬টি স্প্যান পথে রয়েছে বা চীন থেকে আসার অপেক্ষায় রয়েছে।
সেতুর নিচ তলায় চলবে ট্রেন। তাই নিচতলায় ট্রেন চলাচলের জন্য স্লাব বসানো হচ্ছে। জাজিরা প্রান্তের বসিয়ে দেয়া স্প্যানে এ পর্যন্ত ১২৮টি রেলওয়ে স্লাব বসানো হয়েছে। রেল লাইনের জন্য ২ হাজার ৯৫৯টি স্লাবের মধ্যে এরই মধ্যে ১৩০৫টি স্লাব তৈরি হয়েছে। রেলওয়ে স্লাবগুলো তৈরি হচ্ছে মাওয়া প্রান্তের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে। আর ২২ মিটার দীর্ঘ রোডওয়ের জন্য স্লাব প্রয়োজন হবে ২ হাজার ৯১৭টি। মাওয়া ও জাজিরা দু’পারেই এই রোডওয়ে স্লাব তৈরি হয়েছে এ পর্যন্ত ২৮০টি। এই মাসেই রোডওয়ে স্লাব বসানোর কথা রয়েছে।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। আর দু’পারে সংযোগ সেতু রয়েছে আরও প্রায় ৩ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুটি হচ্ছে ৯ দশমিক ৮২ কিলোমিটার। পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।
আপনার মন্তব্য