বিশেষ প্রতিনিধি
শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মেঘনাথ সাহা’র বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে অফিস চালাকালিন প্রাইভেট প্র্যাকটিস করার অভিযোগও রয়েছে। তার দায়িত্বে অবহেলা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে ভেদরগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। তার অধিনস্ত কোন কর্মকর্তা, কর্মচারী তার কোন নির্দেশনা মানছে না। যে যার মতো করে দায়িত্ব পালন করছেন।
এ সকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভেদরগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মেঘনাথ সাহা তার চেম্বারে বসে টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। আর সরকারী ভাবে চিকিৎসা নিতে আসা অসহায় গরীব রোগীরা তার টেবিলের সামনে দাড়িয়ে আছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দেখা গেল ডাঃ মেঘনাথ সাহা ভেদরগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থিত মর্ডান ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আল্টাসোনোগ্রাফী করছেন। তখন তাকে প্রশ্ন করলে, তার উত্তরে তিনি বলেন এখন রোগী নাই তাই মর্ডান ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আল্টাসোনোগ্রাফী করতে এসেছেন। তাৎক্ষণিক ভাবে তার চেম্বারের সামনে গিয়ে দেখা গেলো, ২৫/৩০ জন গরীব অসহায় রোগী তার কাছে চিকিৎসা নেয়ার জন্য চেম্বারে অপেক্ষা করছে। এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনেক কক্ষে মেডিকেল অফিসারের নাম ফলক লাগানো থাকলেও কোন ডাক্তারকেই পাওয়া যায়নি। শুধু মাত্র পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডাঃ তরুণ কুমার সাহাকে রোগী দেখতে দেখা যায়।
জানা যায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসকরা উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মেঘনাথ সাহাকে নিয়মিত মাসওয়ারা দিয়ে থাকেন। যার প্রেক্ষিতে তারা নিয়মিত অফিসে না এসে বাইরে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করছেন।
এ ব্যাপারে গুলমাইজ গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আবু তাহের ছৈয়াল বলেন, আমি আজ আট দিন যাবৎ জ্বরে ভুগতেছি। ডাঃ মেঘনাথ সাহাকে দেখাবো বলে সকাল ১০ থেকে অপেক্ষা করছি। টিকেট নিয়ে গিয়েছিলাম। তিনি দেখেন নাই। ডাক্তারের ফি লাগবে। আমার কাছে ফি দেয়ার মতো টাকা নেই। তাই চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ি চলে যাচ্ছি। নারায়ণপুর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা হনুফা বিবি নামে আরেক রোগী বলেন, আমি ডাঃ মেঘনাথ সাহার কাছে চিকিৎসা নিতে আসছিলাম। আমি প্রথম বিনে পয়সায় চিকিৎসা নেয়ার জন্য টিকেট করেছিলাম। তখন জানলাম হাসপাতালে ঔষধ নাই। তাই ফি দিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে প্রেসক্রিপশান নিলাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মচারী বলেন, আমাদের মেঘনাথ স্যারইতো কাজে ফাঁকি দেয়। অফিস চলাকালিন তিনি প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন। যখন তখন ক্লিনিকে চলে যান, তা দেখেন না। আমরা একটু ফাঁকি দিলেই যতো দোষ। আসলে আমাদের স্যারের প্রশাসন চালানোর মতো কোন ক্ষমতা নেই। তিনি চিনেন টাকা। টাকার পেলে তিনি সকল অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেন।
এ ব্যাপারে ভেদরগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মেঘনাথ সাহা’র সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, একটা জরুরী রোগী ছিলো তাই আল্টাসোনোগ্রাম করতে গিয়ে ছিলাম। আর অফিস চলাকালিন আমি প্রাইভেট প্র্যাকটিস করি না। কোন রোগী যদি খুশি হয়ে ফি দেয় সেটা তো অন্য ব্যাপার।
এ ব্যাপারে শরীয়তপুর সিভিল সার্জন ডাঃ নির্মল চন্দ্র দাসের সাথে সরাসরি আলাপ কালে তিনি বলেন, অফিস চলাকালিন যদি কোন কর্মকর্তা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে, তাহলে তা ঠিক করছে না। আমি ব্যাপারটি দেখছি।
স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ
মার্চ ৬, ২০১৮ , ২২:২৮
আপনার মন্তব্য